Thursday, November 7, 2013

আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার পথ

তামান্না রহমান সঞ্চিতা

সমুদয় প্রশংসা এই বিশ্বজগতের মালিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি
মানবজাতির হেদায়াত ও মুক্তির জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। হযরত
আদম (আঃ) ছিলেন প্রথম নবী ও রাসূল। কেবল এখানেই শেষ নয়, আল্লাহ্-তাআলা নবী-
রাসূলদের নিকট কিতাবও প্রেরণ করেছেন, যাতে তাঁরা কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ী
উম্মতকে পরিচালিত করতে পারেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র
প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর মাধ্যমে নবী-রাসূলদের আগমন ধারা সমাপ্ত
হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী-রাসূল আগমণ করবেন না। আসবেনা কোন
আসমানী কিতাবও। মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়, মহাগ্রন্থ “আল-কোরআন” সর্বশেষ ও
চূড়ান্ত আসমানী কিতাব। এটি শুধু আরব জাতির জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর

জন্য নাযিলকৃত। সূরা আল-ক্বলম, আয়াত-৫২ এবং সূরা তাকভীর, আয়াত-২৭ এ মহান আল্ল
াহ্ বলেন-
“আর এটি (কোরআন) পুরো বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ।”
সূরা যুমার এর আয়াত-৪১ এ বলা হয়েছে,
“মানুষের কল্যাণ নিমিত্ত আমি আপনার নিকট প্রেরণ করেছি সত্য ধর্মসহ কিতাব।
আর যে কল্যাণের পথে আসে সত্য ধর্মসহ কল্যাণ নিশ্চিত করে। আর যে ভ্রষ্ট হয়, সে নিজের
অনিষ্টই করে। আপনি তার জন্য দায়ী নন।”
সূরা ইবরাহীম এর ৫২নং আয়াতে আরো বলা হয়েছে-
“এটি মানুষের জন্য একটি সংবাদনামা এবং এর দ্বারা মানুষ ভীত হয় এবং যাতে জেনে
নেয় যে, উপাস্য তিনিই একক এবং যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।”
আল্লাহ্ সুবহানাহু তাআলা গোটা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে তাঁর সবচেয়ে
প্রিয় বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে প্রেরণ করেন।
আল-কোরআনের ২১নং সূরা আম্বিয়ার ১০৭ আয়াতে মহান আল্লাহ্ ঘোষণা করেনÑ
“আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত (আশীর্বাদ) স্বরূপ।”
তিনি আরো বলেছেন-
“(হে নবী) আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও
(জাহান্নামের) সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।”
(সূরা সাবা, আয়াত-২৮)
ইসলাম আল্লাহ্ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ইসলামী জীবনধারায় কুরআনের মতই
সুন্নাহ্ অর্থাৎ হাদিস গুরুত্বপূর্ণ। কোরআনের পরেই হাদীসের স্থান। সুন্নাহ্ তথা
হাদীসের জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া কুরআন মাজীদের মর্ম ও শিক্ষা হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব নয়।
রাসূল (সাঃ) তাঁর কথা, কাজ ও অনুমোদনের মাধ্যমে অর্থাৎ হাদিসের মাধ্যমে আমাদের
ইসলাম পালন করার যেসব নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান, আচার-আচরণ ও রীতি পদ্ধতি
জানিয়ে ও শিখিয়ে দিয়ে গেছেন তার নাম হলো ‘সুন্নাতে রসূল’ বা ‘রাসূলের
সুন্নাহ্।’
মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন-
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তোমরা তা গ্রহণ কর আর যা থেকে তোমাদেরকে বারণ
করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাক।”
(সূরা হাশর : ৭)
বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন-
“আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা শক্তভাবে ধারণ
করবে, ততদিন তোমরা কিছুতেই পথভ্রষ্ট বা বিভ্রান্ত হবে না; সে দুটি জিনিস হলো
“আল্লাহ্র কিতাব” ও তাঁর “রাসূলের সুন্নাহ্।”
অসীম দয়ালু মালিক আল্লাহ্র ভালবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদের তাঁর প্রিয়
হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে-ও ভালবাসতে হবে, তাঁকে অনুসরণ করতে হবে।
মহান কবি কাজী নজরুল ইসলাম অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাঁর ইসলামী সঙ্গীতেও সে কথাই
তুলে ধরেছেন।
“আল্লাহ্ কে যে পাইতে চায়,
হযরতকে ভালবেসে…”
অন্য একটি ইসলামী সঙ্গীতে তিনি বলেছেন-
“(মোরা) রসূল নামের ফুল এনেছি গাঁথবি মালা কে?
(এই) মালা দিয়ে রাখবি বেঁধে আল্লাতাআলা কে।”
“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি” একথা শুধু মুখে দাবি করলেই চলবেনা, কর্মের
মাধ্যমে তার প্রমাণ দিতে হবে। তবেই মহান আল্লাহ্র দীদার লাভ করার আশা করা যেতে
পারে। মহান আল্লাহ্ স্পষ্টভাবে বলেছেন-
‘(হে মুহাম্মদ) আপনি বলে দিন যদি তোমরা আল্লাহ্র ভালবাসা পেতে চাও তবে
আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ্ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা
করে দিবেন। আর আল্লাহ মহাক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।”
(সূরা আলে ইমরান-৩১)
অসীম দয়াময়, প্রেমময় প্রভু আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন, ইহকাল ও
পরকালে মহা-সাফল্য অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

No comments:

Post a Comment