Tuesday, March 19, 2013

কুরবানির ইতিহাস

পৃথিবীর ইতিহাসে কুরবানি কবে থেকে চালু হয়েছে জানতে গেলে আল্লহ বলেন, আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কুরবানির বিধান দিয়েছি যাতে তারা পালিত চতুস্পদ জন্তুর উপর আলস্নাহর নাম উচ্চারণ করে যা তিনি তাদেরকে খোরাকী স্বরূপ দান করেছেন (সূরা হজ্জ ৩৪ আয়াত)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, (হযরত আদম (আ) থেকে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (স) পর্যন্ত) প্রত্যেক জাতিকে আলস্নাহ তাআলা তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানির বিধান দিয়েছেন। (তফসীরে নাসাফী ৩য় খন্ড ৭৯ পৃষ্ঠা ও কাশশাফ ২য় খন্ড ৩৩ পৃষ্ঠা)

কুরআনের ৬ষ্ঠ পারায় সূরা মায়িদার ৮ম রুকুতে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ)-এর দুই পুত্র কাবীল ও হযরত হাবীলের কুরবানির বর্ণনা আছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ঐটাই প্রথম কুরবানি। তফসীরের বর্ণনায় তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই। মুফাসসিরে কুরআন হযরত ইবনে আব্বাস বলেন, হযরত হাওয়া আলাইহিস সালামের গর্ভে জোড়া জোড়া সন্তান পয়দা হোত। কেবল হযরত শীস (আ) ছাড়া। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। সেই সময় আদম (আ) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। কারণ, তখন যে- জোড়ার সাথে যে-মেয়ে জন্মাত সেই জোড়ার ছেলের সাথে ঐ জোড়ার মেয়ের বিয়ে হালাল ছিল না। অতঃপর হাওয়া (আ) কাবীলের সাথে একটি সুন্দরী মেয়েকে জন্ম দেন যার নাম ইকলীমা এবং হাবীলের সাথে এমন একটি মেয়ে জন্ম দেন যে ইকলীমার মত ছিল না। ঐ মেয়েটির নাম লিয়ূযা। অতঃপর আদম (আ) যখন উক্ত দুই জোড়ার বিয়ে দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তখন কাবীল বলে, আমি আমার জুড়ি বোনের হকদার বেশি। তথাপি আদম (আ) তাকে তাঁর নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানলোনা। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না। অতঃপর তাঁরা সবাই কুরবানি দেবার ব্যাপারে একমত হলেন।

তাঁদের কুরবানির পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লহমা আবু আলী আলফারসী বলেন, কাবীল ছিলো চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের কোরে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি অাঁটি কুরবানির জন্য পেশ করেন। আর হাবীল ছিলেন পশু পালনকারী। তাই তিনি তাঁর জন্তুর মধ্য থেকে সব চেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানির জন্য পেশ করেন। অতঃপর হাবীলের জন্তুটি আসমানে তুলে নেওয়া হয়। যা যেখানে চরতে থাকে! পরিশেষে ঐ দুম্বাটি দিয়ে হযরত ইসমাইল আলায়হিস সালামকে বাঁচিয়ে নেওয়া হয়। পূর্ববতর্ী আলেমদের একটি দল একথা বলেন। কিন্তু কেউ কেউ বলেন, আসমান থেকে আগুন অবতীর্ণ হয় এবং হাবীলের কুরবানিটি জ্বালিয়ে দেয়। (তফসীর ইবনে কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩য় খণ্ড ৪৫ পৃষ্ঠা ও ফতহুল কাদীর ২য় খণ্ড ২৮ ও ২৯ পৃষ্ঠা)

হযরত আদম আলাইহিস সালামের যুগে তাঁরই পুত্র কাবীল ও হাবীলের কুরবানি চলতে থাকে। সূরা হজ্জের ৩৪নং আয়াতটি ওর প্রতি ইঙ্গিত করে। তবে ঐসব কুরবানির কোন বর্ণনা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। বর্তমানে আমাদের উন্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে যে কুরবানি চালু আছে তার সম্পর্ক হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নিজপুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার সাথে।

No comments:

Post a Comment